এন্ড্রোয়েড এর ডিসপ্লে নিয়ে খুটিনাটি সবকিছু ( All About Android Display )

আজ ডিসপ্লে নিয়ে খুঁটিনাটি সব আলোচনা করবো, ইতিহাসের LCD থেকে শুরু করে Super Amoled Plus পর্যন্ত ।
তো চলুন শুরু করা যাক ,



LCD ইতিহাস ::

TN LCD Display:
TN এর পুর্নরুপ হলো Twisted Nematic Technology. আর LCD এর পুর্নরুপ হলো Liquid Crystal Display. সারা বিশ্বে সস্তা মোবাইলের একমাত্র ভরসার নাম TN Display


সুবিধাসমূহ:
১। বিশ্ববাজারে সবচেয়ে সস্তা মোবাইলের ডিসপ্লে
২। নিম্ন মানের চাইনিজ ফোনগুলোতে এ ডিসপ্লে ব্যাবহার করা হয়।
৩। TN Display তৈরিতে সবচেয়ে খরচ কম এবং এটি পুনরায় ব্যাবহার যোগ্য।

অসুবিধাসমূহ:
১। এই ডিসপ্লের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা এর সবচেয়ে কম viewing angle.অর্থাৎ সোজা কথায় আপনি এই ডিসপ্লেতে ফ্রন্ট কিম্বা এক থেকে দুই সাইট বাদে বিভিন্ন সাইট থেকে তাকালে নেগেটিভ দেখতে পারবেন।
২। এছাড়া TN display তে 24 bit sRGB color gamut এ কোন ডিসপ্লে দেখা যায় না।

TFT LCD Display :
TFT এর পুর্নরুপ হলো Thin Film Transistor Technology. আর LCD এর পুর্নরুপ হলো Liquid Crystal Display. কম ও মাঝারী দামের সেটের এই ডিসপ্লে বেশি ব্যবহার করা হয়।

সুবিধাসমূহ:
১। তৈরী করা যায় অনেক সস্তায়
২। কম বাজেটের স্মার্টফোনগুলোতেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়
৩। সবচেয়ে বেশি প্রচলিত স্ক্রীন টাইপ
৪। ভাল কোয়ালিটির TFT LCD স্ক্রীন বেশি উজ্জ্বল হবে আর যেকোন দিক দিয়ে তাকালেই মোটামুটি পরিস্কার দেখা যাবে।
৫। TN display এর একটু উন্নত এডিশন হলো TFT display

অসুবিধাসমূহ:
১। খারাপ কোয়ালিটির TFT LCD ডিসপ্লে যুক্ত মোবাইলে রঙ ফ্যাকাশে দেখাবে এবং স্ক্রীনের সাইড দিয়ে তাকালে অন্ধকার দেখা যাবে
২। এ ধরনের ডিসপ্লেতে ব্যাটারীর খরচ বেশি হয়
৩। সূর্যের আলোতে এই স্ক্রীনে পরিস্কার দেখতে অসুবিধা হয় ৪। এই ডিসপ্লেতে ডিসপ্লের কালো অংশ তেমন গাঢ় বা ডিপ নয়। এখন আমরা সাধারণত দেখে থাকি প্রায় অধিকাংশ লো বাজেট ও মাঝামাঝি বাজেটের মোবাইল গুলোতে এটা অহরহ ব্যবহার হচ্ছে। তবে ব্রান্ড ভেদে এর মান একটু কম বেশি হতে পারে।

Super LCD (SLCD):
এটি LCD স্ক্রীনের আধুনিকতম সংস্করন। এই ডিসপ্লেতেও সূর্যের আলোতে সহজেই দেখা যায়। এছাড়াও AMOLED স্ক্রীন থেকে রঙ আরো ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে।

সুবিধাসমূহ:
১। LCD স্ক্রীনের আধুনিকতম সংস্করন
২। LCD এর তুলনায় এই ডিসপ্লেতে সূর্যের আলোতে সহজেই দেখা যায়
৩। AMOLED স্ক্রীন থেকে রঙ আরো ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে
৪। সাধারন LCD ডিসপ্লে থেকে এ ধরনের ডিসপ্লেতে ব্যাটারীর খরচ কম করে।
৫। TN IPS ডিসপ্লের পরিবর্তিত রূপ হচ্ছে Super LCD display
৬। এর Wide Viewing Angle , Brightness, Contrasity TN, TFT ও IPS ডিসপ্লের চেয়ে বহুগুন বেশি।
৭। তাছাড়া ইমেজের কালো অংশের গাঢ়ত্ব অধিক হওয়ায় ছবি ও মুভি নিখুঁতভাবে দেখা যায়। Super LCD display এর একটি উদাহরণ হচ্ছে Samsung Galaxy Note 10.1 (2014 Edition) এর ডিসপ্লে।

অসুবিধাসমূহ:
১। কালার সাপোর্ট রেশিও কম Super Amoled থেকে।
২।  Super LCD কখনোই ট্রু ব্লাক অংশকে ফুটিয়ে তুলতে পারে না।
৩। Amoled থেকে Super LCD ডিসপ্লেতে ব্যাটারীর খরচ বেশি করে।


IPS LCD Display:
IPS এর পুর্নরুপ হলো In-Plane Switching. এটি TFT LCD Display থেকে উন্নত। এই স্ক্রীনের ডিসপ্লে কোয়ালিটি ভালো এবং ব্যাটারী কম খরচ হয়। এটি সাধারন LCD থেকে বেশী দামের বলে বেশী দামের স্মার্টফোনগুলোতে ব্যবহার করা হয়।

সুবিধাসমূহ: 
১। TN TFT ডিসপ্লের low viewing angle এর সমাধান দিতে ডিসপ্লের জগতে হাজির হয়েছে IPS Display
২। প্রথমদিকে এর উৎপাদন খরচ বেশি হলেও আশার কথা এখন এর উৎপাদন খরচ অনেক কম।
৩। ডিসপ্লে এর দাম কম হওয়াতে এখন কম টাকায় IPS LCD মোবাইল বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।


অসুবিধাসমূহ: 
১। IPS Display এর একটা সমস্যা হল এর ব্রাইটনেস ও কন্ট্রাসিটি কিছটা কম।
২। সাধারন LCD থেকে এর দাম বেশি।

Retina Display:
এই স্ক্রিনটি শুধুমাত্র আইফোনে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর নাম রেটিনা ডিসপ্লে বলা হয় কেননা মানুষের সাধারন চোখ দিয়ে পিক্সেলগুলোকে আলাদা করা বোঝা সম্ভব নয়। এর ছবির কোয়ালিটি,শার্পনেস খুবই উন্নত মানের। LCD-IPS display এর বেজড ভার্সন হল RETINA display ও NOVA display। এই উভয় ডিসপ্লেই LG ব্রান্ডের তৈরি।

OLED/Amoled/sAmoled এর ইতিহাস ::

LED/OLED Display:


OLED এর পুর্নরুপ হলো Organic Light Emitting Diode. এটি LCD থেকে ভালো কোয়ালিটির মোবাইল স্ক্রীন। এই ডিসপ্লে অনেক উজ্জ্বল,কৌনিক দিক থেকে সহজেই দেখা যায় এবং বেশ হালকা। প্রায় সব নামিদামী বিগ বাজেটের মোবাইল গুলোতে LED display দেখা যায়। এর অসাধারণ সুন্দর viewing angle ও Deeper Black Display র জন্য এটি LCD display কে ছাড়িয়ে গেছে। এর রহস্যের মুল কারন এতে কোন Backlight ব্যাবহার করা হয় না।এর অর্গানিক কম্পাউন্ড নিজেই ব্যাকলাইটের কাজ করে। ফলে ছবি ও মুভি হয় নিখুঁত ও অসাধারণ। ডিসপ্লের ব্রাইটনেস ও কনট্রাস্ট হয় অত্যন্ত চমৎকার।





LED display আবার বিভিন্ন ধরনের,




AMOLED Display:


AMOLED এর পুরোটি হলো Active Matrix Organic Light Emitting Diode. 


সুবিধাসমূহ: 
১। এই ডিসপ্লের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো পিক্সেলগুলো নিজ থেকেই আলো তৈরী করতে পারে
২। এর excellent viewing angle, Most deeper black display, নিখুঁত ছবি একে অনন্য করেছে।
৩। OLED স্ক্রীনের মতই এর ডিসপ্লে অনেক উজ্জল,শার্প এবং হালকা।
৪। হাই কোয়ালিটির স্মার্টফোনগুলোতে এই স্ক্রীন এখন অনেক ব্যবহার করা হয়।

অসুবিধাসমূহ: 
১। এর একটা সমস্যা যে সূর্যের আলোয় এর ডিসপ্লের ভিজিবিলিটি কিছুটা কম।


Super AMOLED Display:


Super Amoled Display এর কিছু সুবিধা তুলে ধরা হলো,

সুবিধাসমূহ:
১। AMOLED এর সূর্যের আলোর কম ভিজিবিলিটির সমাধান দিতে Samsung নিয়ে এসেছে Super AMOLED
২। এটি AMOLED ডিসপ্লে এর আধুনিক ভার্সন।
৩। স্যামসং এর গ্যালাক্সী স্মার্টফোনগুলোতে ব্যবহার করা হয়।
৪। এই ডিসপ্লে সবচাইতে হালকা ডিসপ্লে।
৫। ব্যাটারীর খরচও আগের থেকে কম হয়।
৬। এই ডিসপ্লেটি সূর্যের আলোয় নিখুঁত ভাবে দেখা যায়।
৭। এতে পাবেন হাই কোয়ালিটির ছবি ও মুভি দেখার নিশ্চয়তা Super Amoled এর উন্নত সংষ্করণ হচ্ছে Super Amoled plus

Touch Screen ২ই প্রকার, নিম্নে টা নিয়ে আলোচনা করা হলো,




Resistive Touchscreen:
এ ধরনের টাচস্ক্রীনে পর্দায় দুটি স্তর থাকে। প্রথম ও ২য় স্তরের মাঝে ফাকা স্থান থাকে। প্রথম স্তরে চাপ পড়ার ফলে মাঝের ফাকা অংশটি বেকিয়ে গিয়ে ২য় স্তরে চাপ পড়বে। এবং তারপর মোবাইলের প্রসেসরে সংকেত পাঠাবে। আর এভাবেই এই টাচ কাজ করে। Resistive Touchscreen আঙ্গুল বাদেও যেকোন কিছু দিয়ে টাচ করে ব্যবহার করা যায়। এতে স্ক্রীনে বেশি চাপ দিতে হয় এবং মাঝে মাঝে ঠিক জায়গামত চাপ পড়েনা। স্টাইলাস ব্যবহারের জন্য এই স্ক্রীন উপযোগী।

Capacitive Touchscreen:
এ ধরনের টাচ স্ক্রিনে শুধুমাত্র মানুষের হাতের স্পর্শের মাধ্যমেই কাজ করা যায়। এটির ডিসপ্লেতে স্পর্শ করার সাথে সাথেই ইলেক্ট্রোস্টাকিক ফিল্ড তৈরী হয় এবং দ্রুত প্রসেসরে সিগনাল পৌছানোর মাধ্যমে কাজ করে।
Capacitive Touchscreen বেশি দামের আধুনিক স্মার্টফোনগুলোতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি ব্যবহার আরামদায়ক। তবে মানুষের আঙ্গুল বা অংগ ব্যাতিত অন্য কিছু দিয়ে টাচ করা যায়না।

Gorilla Glass:
গরিলা গ্লাস হলো alkali-alluminium যৌগের তৈরী শক্ত ও মজবুত ডিসপ্লে। এটি আপনার মোবাইলের স্ক্রীনকে দাগ,আচড়,ঘষা-মাজা এমনকি হাতুরীর শক্ত আঘাত থেকেও রক্ষা করবে। বর্তমানে Corning কোম্পানীর গরিলা গ্লাস বেশিরভাগ স্মার্টফোনে ব্যবহার করা হয়।

আজ এই পর্যন্ত, আপনাদের মতামত আমাদের জানাবেন।

ধন্যবাদ ...

আমাকে ফলো করতেঃ
1. Google Plus Link
2. Facebook Link

প্লিজ Subscribe YouTube Channel, টেকনিক্যাল ভিডিও দেখার জন্য। 

মোঃ সবুজ খান
টেক প্রিয়জন টিম

2 Comments

  1. ভাই আমি আমার স্যামসাং গ্যালাক্সি j7 প্রাইম এর জন্য কোন ডিসপ্লে টা নির্বাচন করতে পারি। যেটা এই সেটের জন্য বেস্ট হবে??

    ReplyDelete
  2. customer service e jan tara e nirbachon kore dibe ...

    ReplyDelete
Previous Post Next Post

Contact Form